স্টারমেকারের প্রিয় শিল্পীদের জন্য গানের উন্নতি নির্দেশিকা
A. গান বাছাই (Song Selection):
গান বাছাই বলতে নিজের কণ্ঠ আর স্টাইলের সঙ্গে মানানসই গান নির্বাচন করা যা প্রতিটি শিল্পী অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। নিজের কণ্ঠের রেঞ্জ অনুযায়ী গান বেছে নিতে হবে। শুরুর দিকে খুব কঠিন গান না নিয়ে ধীরে ধীরে লেভেল বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে ১/২ বার গান গেয়ে দেখা যেতে পারে যে সেটা মানানসই হচ্ছে কিনা।
B. সাউন্ড সেটিংস ও হেডফোন:
গায়কীর পাশাপাশি সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক বড় একটা সহয়ক। মাইক্রোফোন, সাউন্ড আর নয়েজ ঠিক রাখার ব্যাপারে খেয়াল রাখা। ভাল মানের হেডফোন নেওয়া যেটাতে নয়েজ ক্যান্সিলেশন আছে।
বেশি দামের হলেই যে ভাল হবে এমন না, টেস্ট করে দেখতে হবে। টেস্ট রেকর্ড করে শুনে দেখুন। নয়েজ কমাতে ভালো হেডফোন ব্যবহার করার বিকল্প নেই।
C. নিয়মিত চর্চা ও ওয়ার্ম-আপ:
গলা গরম রাখা আর উচ্চারণ পরিষ্কার করা। গলার বা কণ্ঠের ব্যায়াম করুন কিছু, গান শুরুর আগে হালকা সুরে গলা খোলো বা কিছুটা সারগাম প্র্যাক্টিস করে নেওয়া যেতে পারে। গান করার ২/৩ ঘণ্টা আগে কোন সলিড খাবার না খাওয়া। ভরা পেটে গান না করা। পানি, লেবু বা মধু দিয়ে র* চা খেলে গলা খোলা থাকে। বেশি বেশি করে পানি খেতে পারেন গান করার আগে।
D. মানসিক প্রস্তুতি:
আত্মবিশ্বাসী আর রিল্যাক্স থাকা। যেকোন গানের ক্ষেত্রেই আগে থেকে গানটার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে সঠিক লিরিক্স দেখে একটু আত্মস্থ করে নেওয়া। মন ভালো রাখো, তাড়াহুড়া করে গাইবেন না, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখবেন। গলা ছেড়ে, প্রাণ খুলে গাইবেন।
E. ভিডিও অ্যাঙ্গেল ও লাইটিং:
ভিডিও গানের ক্ষেত্রে ফ্রেম, আলো আর ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিক রাখা। ক্যামেরা চোখের সমান রাখো, আলো পর্যাপ্ত দাও, ব্যাকগ্রাউন্ড পরিপাটি রাখুন।
A. সুর ও তাল:
সঠিক সুরে আর ঠিক তালে গান গাওয়া। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মনোযোগ দিয়ে শুনে টাইমিং মিলিয়ে গাইতে হবে। প্রয়োজনে মিউজিক একটি বাড়িয়ে নিয়ে গাওয়া যেন বিটগুলো পরিস্কার শোনা যায়। এইক্ষেত্রে হাতে বা পায়ে বিট/তাল ধরে সেই সাথে সুর মিলিয়ে গাইতে হবে।
B. উচ্চারণ ও শব্দচয়ন:
শব্দগুলো পরিষ্কারভাবে বলা। প্রতিটা শব্দ স্পষ্টভাবে বলো, ভুল উচ্চারণ এড়াতে হবে। কিছু গানে মূল শিল্পীকেও ভুল উচ্চারণে গাইতে শোনা যায়। এই ক্ষেত্রেও সঠিক উচ্চারণ অনুসরণ করে গাইলে ভাল হয়। আঞ্চলিকতা পরিহার করে গাইতে হবে। প্রয়োজনে কয়েকটা ভার্সন শুনে, রেকর্ডিংএর আগে নিজে নিজে বেশি করে উচ্চারণ করে একটু অনুশীলন করে নেওয়া। বিদেশী ভাষায় গাওয়ার ক্ষেত্রে সেই ভাষার বর্ণমালা, কিছু নাটক, সিনেমা বা খবর দেখে সেই ভাষা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে।
C. ভাব ও আবেগ (Expression):
গানের মুড বা আকুতি বা চাহিদা অনুযায়ী মুখভঙ্গি ও আবেগ প্রকাশ করে গাইতে হবে। গানের অর্থ অনুভব করুন, মুখভঙ্গি ও কণ্ঠে তার প্রতিফলন আনুন। দুঃখের গানে দুঃখ নিয়ে, সুখের গানে আনন্দ নিয়ে হাসি মুখে গাইতে চেষ্টা করুন। ভিডিও গান থাকলে সেইখানে যারা কণ্ঠ মেলাচ্ছেন তাদের অনুভূতির প্রকাশ দেখেও ধারণা নেওয়া যেতে পারে।
D. এনার্জি ও ভলিউম কন্ট্রোল:
পুরো গানজুড়ে ভারসাম্যপূর্ণ শক্তি ও আওয়াজ বজায় রাখার চেষ্টা করুন। শুরুর দিকে একটু বেশি এনার্জি নিয়ে আরম্ভ করে শেষের দিকে একেবারেই শক্তি শেষ যেন না হয়, সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
কোথাও খুব জোরে বা খুব আস্তে নয়, ভারসাম্য রাখুন।
E. ক্যামেরার প্রতি মনোযোগ (Presence):
ভিডিওর ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টি, হাসি, আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি জরুরী। এদিকে সেদিকে না তাকিয়ে গান গাওয়ার সময় ক্যামেরার দিকে তাকান, হাসি বা গানের ভাব অনুযায়ী মুখের এক্সপ্রেশন বজায় রাখুন।
A. টেস্ট ও রিভিউ:
রেকর্ড শেষে নিজে শুনে ভুল খুঁজে দেখা খুবই দরকারী। নিজের গান ১–২ বার শুনে প্রয়োজন হলে আবার রেকর্ড করুন। পোষ্ট করার আগে মিউজিক কমিয়ে বা বাড়িয়ে, প্রয়োজন মতন সাউন্ড, ভয়েস, উচ্চারণ, লিরিক্সের সাথে মিল আছে কিনা দেখে নিন। কোথাও কোন অংশ বাদ পড়েছে কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
B. শ্রোতার সঙ্গে সংযোগ (Engagement):
অন্যদের গান শোনা, কমেন্ট ও রিপ্লাই করা আপনার গানের সম্পর্কে অন্যান্যদের মতামত জানতে সাহায্য করবে। অন্যের গানের ক্ষেত্রেও সহযোগিতামূলক আচরণ রাখুন, অন্যকে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য সুন্দর মন্তব্য দিন। সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গঠনমূলক বা ইমপ্রুভমেন্টের ব্যাপারে কোন পরামর্শ থাকলে বিনয়ের সাথে অনুমতি সাপেক্ষে ইনবক্সে বা একান্তে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
C. ইমোশনাল ব্যালেন্স:
প্রতিটি শিল্পীরই মানসিক স্থিরতা ও ধৈর্য বজায় রাখা আরো একটা বিশেষ যোগ্যতা হওয়া দরকার । নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় মন খারাপ না করে সেটাকে শিখে উন্নতি করুন। একদিনে সফলতা আসবে না। তাই প্রতিনিয়ত শিখতে থাকুন, পজেটিভ্লি নেওয়ার চেষ্টা করুন।
D. লার্নিং ও উন্নতি মনোভাব:
নিজের সীমাবদ্ধতা চিনে উন্নতি করার কোন বিকল্প নেই।
ভাল শিল্পী বা ভাল পরামর্শ দিতে জানেন, গানের ব্যাপারে বোঝেন এমন কিছু বন্ধু বানিয়ে নিন।
ভালো শিল্পীদের শুনুন, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ রাখুন। অন্যেরা যে ভুল গুলো করে থাকেন সেগুলো সচেতনার সাথে এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমেও অনেক শেখার থাকবে। বিভিন্ন গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেকে যাচাই করে নিয়ে শেখা। এই ধরণের অনুষ্ঠান ইউটিউব থেকে দেখে বা স্টারমেকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকেও দেখে শেখার মনোভাব রাখুন
শেষ কথা:
গান শুধু কণ্ঠের ব্যাপার নয়, এটা মন, অনুভূতি আর প্রকাশের শক্তি। আপনি যত বেশি অনুশীলন করবেন, ততই আপনার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস আর মাধুর্য বাড়বে।
আজকের যুগে শেখার সুযোগ সীমাহীন, YouTube বা অন্যান্য কিছু গানের অ্যাপ বা অনলাইন গাইডে আপনি নিজের মতো করে গান শেখার ও উন্নতির পথ খুঁজে নিতে পারবেন।
তবে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো নিয়মিত প্র্যাকটিস, ধৈর্য, আর নিজের ওপর বিশ্বাস। যে শিল্পী নিজের ভুল শুনে ঠিক করতে জানে, সে একদিনই না একদিন অন্যদের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। আপনার কণ্ঠ একদিন কারও হৃদয়ে ছোঁয়া দেবে, তাই হাল ছাড়বেন না। প্রতিদিন অল্প হলেও গান করুন, শিখুন, আর আনন্দে ভরিয়ে তুলুন সুরের জগৎকে।
এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতেঃ এখানে ক্লিক করুন
কীভাবে পার্টি রুমে গাইতে হবে জানতেঃ ক্লিক করুন এখানে: Singing in a party room
কীভাবে Duet গান গাইতে হবে জানতেঃ ক্লিক করুন এখানে: Singing a duet song
কীভাবে Solo গান গাইতে হবে জানতেঃ ক্লিক করুন এখানে: Singing a Solo
StarMaker-এ গান করার Sound Setting সম্পর্কে জানতেঃ ক্লিক করুন এখানে: Sound Setting